ফাতেমি সাম্রাজ্যের ইতিহাস
লেখক : ড. আলী মুহাম্মদ আস-সাল্লাবী
প্রকাশনী : মাকতাবাতুন নূর
বিষয় : ইতিহাস ও ঐতিহ্য
অনুবাদ: মিফতাহ আল ফাতাহ
পৃষ্ঠা: ২৫৬
কভার: হার্ড কভারমহাবীর, মহান বিজেতা, বিপ্লবী সিপাহসালার, ইসলামি ইতিহাসের মহানায়ক, সুলতান সালাহউদ্দীন আইয়ুবি রহ.-এর হাতে ৫৬৭হি. সনে ফাতেমি সাম্রাজ্যের কবর রচিত হয়। এ সাম্রাজ্যের সময়কাল ছিলো প্রায় তিন শতাব্দী।তাদের প্রথম শাসক ছিল মাহদি। সে সালমিয়ার হাদ্দাদ বংশীয় লোক। তার নাম উবায়দ। সে মূলত একজন ইহুদি ছিলো। পরবর্তীতে মধ্যপ্রাচ্যে এসে উবায়দুল্লাহ নাম ধারণ করে প্রতিক্ষিত ‘মাহদি’ পরিচয়ে আত্মপ্রকাশ করে এবং ফাতেমি বংশীয় হওয়ার দাবি করে। ২৯৮ হিজরিতে উবায়দুল্লাহ মাহদি ক্ষমতার আসন দখল করে রাফেযি ও কুফরি মতবাদ ছড়াতে শুরু করে। তাদের শাসনামলে রাস্ট্রসমূহে অন্যায়-অপরাধ, অশ্লিলতা ও দাঙ্গা-হাঙ্গামা চরম আকার ধারণ করেছিলো। রাষ্ট্রযন্ত্রের ছত্রছায়ায় আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের অনুসারী অসংখ্য অগণিত মুসলমানকে হত্যা করা হয়েছে।আর তাদের নারী ও শিশুদেরকে অপহরণ করে তাদের সাথে এমন পৈশাচিক আচরণ করা হতো, যা কল্পনা করলেও গা শিহরিয়ে ওঠে। বক্ষ্যমাণ বইটি এই সাম্রাজ্যের ইতিহাস নিয়েই রচিত চমৎকার একটি বই।এছাড়া বইটিতে আরও যা যা পাবেন:(১) বইটিতে বাতেনী সম্প্রদায় নামে পরিচিত ইসলাম বিদ্বেষী গোষ্ঠীর পরিচয় ও তাদের রাজ্যশাসনের সূচনা এবং উত্থান-পতনের কথা বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
(২) মুসলিম জাতির বিনাশ সাধনে শিয়া-রাফেযিদের মারাত্মক ষড়যন্ত্র ও অপতৎপরতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
(৩) উত্তর আফ্রিকা অঞ্চলে বাতিনী সম্প্রদায়ের সাফল্য ও ব্যর্থতার স্বরূপ উদঘাটনের চেষ্টা করা হয়েছে।
(৪) আহলে সুন্নাহর মতাদর্শ প্রচার-প্রসার এবং সমগ্র উত্তর আফ্রিকা থেকে রাফেযীদের মূলোৎপাটনে সেখানকার আলেম সমাজের গৃহীত ভূমিকা ও পদক্ষেপের কথা বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে।
(৫) শিয়া রাফেজি বাতেনি গোষ্ঠীকে নির্মূল করে ইসলামী অনুশাসন প্রতিষ্ঠায় সুলতান নুরুদ্দীন মাহমুদ ও সালাউদ্দিন আইয়ুবী (র) অসামান্য সংগ্রাম সাধনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
ফাতেমি সাম্রাজ্য ইসলামের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। বাগদাদের আব্বাসীয় খিলাফতের প্রতিদ্বন্দ্বীরূপে উত্তর আফ্রিকা ও মিসরে এদের ফাতেমী খিলাফত তথা শিয়া সাম্রাজ্যের উথান হয়। ওবায়দুল্লাহ আল মাহদী ছিলেন এই খিলাফতের প্রথম খলিফা। হযরত আলী (রা:) ও হযরত ফাতিমা (রা:) এর প্রত্যক্ষ বংশধর বলে তারা নিজেদের দাবি করে। এজন্য এদেরকে ফাতেমিও বলা হয় এবং এদের খেলাফত ফাতেমি খেলাফত নামে সুপরিচিত। তবে এরা নিজেদের ইসলামী খেলাফত নাম দিলেও তাদের আকিদা ও আদর্শ ছিল শিয়া গোষ্ঠীর নামে ইহুদি খ্রিষ্টানদেরই আকিদা বিশ্বাস।
তাইতো ফাতেমি সাম্রাজ্য তথা শিয়াদের রাজ্যশাসনের সূচনা ও উত্থান-পতনের কথা সবিস্তারে তুলে ধরার নিমিত্তে বিখ্যাত লেখক ড. আলি মুহাম্মদ সাল্লাবি রচনা করেছেন "আদ-দাওলাতুল ফাতিমিয়্যাহ" নামক বইটি। মিফতাহ আল ফাতাহ কতৃক বাংলায় অনুবাদের পর যার নাম দেয়া হয়েছে "ফাতেমি সাম্রাজ্যের ইতিহাস।
.
➤ সার-সংক্ষেপঃ-
প্রখ্যাত লেখক ড. আলি মুহাম্মদ সাল্লাবি বইটিকে চারটি অধ্যায়ে বিভক্ত করে আলোচনা করেছেন। উৎপত্তির পর থেকেই শিয়াদের মাঝে অসংখ্য দল-উপদলের সৃষ্টি হয়। এবং নিজেদের মত ও মতাদর্শ প্রচার করতে থাকে। যা মুসলিমদের মতাদর্শের সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক ছিল।
*প্রথম অধ্যায়:- এ অধ্যায়ে শিয়াদের পরিচয়, শিয়া সম্প্রদায়ের সূচনা, তাদের আকিদা বিশ্বাস ও তাদের প্রথম খলিফা উবাইদুল্লাহ মাহদি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
*দ্বিতীয় অধ্যায়:- এখানে উবাইদুল্লাহ মাহদি প্রতিষ্ঠিত উবাইদিয়া সাম্রাজ্যের সঙ্গে উত্তর আফ্রিকার গোত্রসমূহের বিরোধ ও উবাইদিয়া রাফেযিদের মূলোৎপাটনে আহলুস সুন্নাহ আলেমদের গৃহীত পদক্ষেপ ও কর্মপন্থা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
*তৃতীয় অধ্যায়:- এ সনহাজি সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা আবুল ফুতূহ ইউসুফ বিন জিরি এর শাসনামল, উত্তর আফ্রিকার দিকে বনী সুলাইম ও অপরাপর আরব সম্প্রদায়ের অভিযান এবং জিরি সাম্রাজ্য পতনের কারণসমূহ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
*চতুর্থ অধ্যায়:- এ অধ্যায়ে উবায়দিয়া সাম্রাজ্যের পতন, বাতেনী সম্প্রদায়ের ভিত নির্মূল এবং ক্রুসেডার খ্রিষ্টানদের ভরাডুবির কারণসমূহ আলোচনা করা হয়েছে। এসবের পেছনে ইসলামের ইতিহাসের অন্যতম বীর সুলতান নূরুদ্দীন মাহমুদ ও সুলতান সালাহুদ্দীন আইয়ুবী (রহ:) এর অবদান সমূহ আলোচিত হয়েছে।
এছাড়াও বইয়ের শেষে আলোচনার সারাংশ নামে একটি অংশ রয়েছে। যেখানে লেখক পুরো বই সম্পর্কে একনজরে সার-সংক্ষেপ আলোচনা করেছেন।
.
➤ বইটি কেন পড়বেনঃ-
আপনি যদি ফাতেমি সাম্রাজ্যের উত্থান পতন, আকিদা-বিশ্বাস এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে তাদের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান তাহলে বইটি অবশ্যই পড়ুন।
এছাড়াও বইতে পাবেন শিয়া রাফেযিদের নির্মূল করতে সুলতান নূরুদ্দীন মাহমুদ ও সুলতান সালাউদ্দিন আইয়বী (রহ:) এর বিস্ময়কর অবদানের কাহিনী।
.
➤ ব্যক্তিগত অনূভুতিঃ-
বইটি পড়ে শিয়া সম্প্রদায় সম্পর্কে অনেক কিছু জেনেছি। যা এতদিন অজানা ছিল। অনুবাদ ও সম্পাদনাও খুবই চমৎকার হয়েছে। লেখা পড়তে গিয়ে মনে হয় না যে অনুবাদ পড়ছি। বরং যথেষ্ট সহজ ও সাবলীল, ও বোধগম্য ভাষায় রচিত মৌলিক লেখা বলেই মনে হয়েছে।
তাই শিয়াদের সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানতে হলে বইটি সকলের জন্য পড়া জরুরী বলে মনে করি।
.
➤ এক নজরে বই সম্পর্কেঃ-
বইয়ের নাম : ফাতেমি সাম্রাজ্যের ইতিহাস
লেখক : ড. আলি মুহাম্মদ সাল্লাবি
অনুবাদ : মিফতাহ আল ফাতাহ
প্রকাশনী : মাকতাবাতুন নূর
মুদ্রিত মূল্য : ৪৫০ টাকা
পৃষ্ঠা সংখ্যা : ২৫২
0 Comments: