পবিত্র কুরআনের শুরুতেই বলা হয়েছে, "যারা অদৃশ্যে বিশ্বাস করে " (সুরা বাকারা ২ঃ৩) ঈমানের মূল হচ্ছে গায়েবে বিশ্বাস।এমন কিছুতে বিশ্বাস করা যা দেখা যাচ্ছেনা,ধরা যাচ্ছে না, ছোয়া যাচ্ছে না।মানুষ চাইলেই পৃথিবীতে বসে আল্লাহ কে দেখতে পাবেনা। আর এই বিশ্বাস টাই ঈমান,এই বিশ্বাস টাই স্রষ্টার শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষনা করে।এই বইয়ের সাথে জড়িয়ে থাকা অনুভূতি এটাই - আরজ আলী মাতুব্বর দের মত অবিশ্বাসী দের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া যে বিশ্বাসের যৌক্তিকতা আসলে কোথায়!
বইঃ আরজ আলী সমীপে
লেখকঃ আরিফ আজাদ
প্রকাশনাঃ সমকালীন প্রকাশন
প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ ‘এ মাস্ট রিড’ টাইপের বই।
বিশ্বাসী-অবিশ্বাসী, আস্তিক-নাস্তিক সবার জন্য অবশ্যই পাঠ্য। বইটি অবিশ্বাসের কড়াকে ভেঙ্গে গড়েছেন বিশ্বাসের দৃঢ় সৌধ। অবিশ্বাসী মনকে করেছেন পাল্টা বিশ্বাসের প্রশ্ন। বাহাদুর সাজা কিছু মানুষদের অবিবেচক প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন সাবলীল ভাষায়। বইটি দ্বিতীয়বার পড়েছি। বইটি পড়ার পর মন থেকে শুধু একটা কথায় উচ্চারিত হয়েছে, এমন একটি বই-ই আমি এতদিন খুঁজছিলাম। আলহামদুলিল্লাহ। এমন এমন কঠিন প্রশ্নের এত সহজ উত্তর লেখক গল্পে গল্পে উপস্থাপন করেছেন তা বুঝার জন্য বড় কোন বিদ্বান ব্যক্তির দরকার পড়বে না, শুধু বুঝার জন্য একটা সরল মন হলেই হবে। আবার আপসোস হচ্ছে এই ভেবে যে, এর আগে যদি এসব প্রশ্নের উত্তর জানা থাকতো
তাহলে এতদিন যারা নিজেদের বুদ্ধির জাহাজ বলে বড় বড় প্রশ্ন করে বসেছিলো, আর আমরা কম জানা লোকজন তাদের সেসব প্রশ্নের উত্তর দিতে না পরার যে লজ্জা এতদিন পেয়ে আসছি সে লজ্জা আর পেতে হতো না। ইসলাম নিয়ে বিদ্বেষকারীদের সুন্দর একটা কূটকৌশল আছে। আর তাদের এই কৌশলের প্রধান অস্ত্র হলো ‘যুক্তি’।
আপনাকে বা আমাকে তারা তাদের মুখস্থ করা কিছু যুক্তি দিয়ে প্রশ্ন করে বেকায়দায় ফেলবে। আর আমরাও যেহেতু ইসলাম নিয়ে, ধর্ম নিয়ে আমাদেরও খুব বেশি পড়াশুনা নেই তখন আমরাও সেসব যুক্তিতে একদম কাবু হয়ে যাই। মনে হবে এইতো বুঝি জ্ঞানের জাহাজে করে আসা মানুষের যুক্তি। আদৌতে সেসব যুক্তি দিয়ে প্রশ্নের ভিতরে কিছু গোঁজামিল আছে। আর দেখবেন তাদের সকলের প্রশ্নগুলো প্রায় একই ধরণের হয়ে থাকে। তারা ভালো করেই জানেন, এসব প্রশ্নের মাধ্যমেই একমাত্র আপনাকে আমাকে কাবু করা সম্ভব। আর সাধারণ পাবলিক হিসেবে আমারও সেসব প্রশ্নের উত্তর বা যুক্তির খণ্ডন তাৎক্ষনিক করা সম্ভব হয় না বিধায় তারাও তাৎক্ষনিক জয়ের কুটিল হাসি হাসতে পারেন।
বিষয়টা হলো তাৎক্ষনিক যুক্তি খণ্ডন করে উত্তর দিতে না পারলেও যে সত্য জিনিস মিথ্যা হয়ে যাবে এমনটা তো নয়। ধরুন, আপনাকে হঠাৎ আমি প্রশ্ন করে বসলাম, আপনার মা-বাবা কে? আপনিও সহজ সরল বিশ্বাসে আপনার মা-বাবার দিকে আঙ্গুল তুলে বলবেন উনারাই হলেন আমার মা-বাবা। আমি যখন আপনাকে জিজ্ঞাসা করবো, উনারা যে আপনার মা-বাবা তার কি কোন প্রমাণ আছে আপনার কাছে? এই প্রশ্ন যেমন আপনাকে হতচকিত করবে। এটা আপনার এতদিনকার বিশ্বাসের উপর কঠিন এক প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়া। নিশ্চয় আপনি ওই মুহূর্তে আপনি কোন প্রমাণ দিতে পারছেন না বলে হয়তো একটু হলেও আপনার কষ্ট হবে। আবার এমন নয় যে, এই মামুলি প্রশ্নের উত্তরের জন্য আপনি এবং আপনার মা-বাবার ডিএনএ (DNA) টেস্ট করে প্রমাণ দিতে যাবেন! আসলে এটার প্রমাণ দেয়ারও দরকার পরছে না।
সব কিছু প্রমাণ দেয়ার দরকার পরে না। কিছু জিনিস বিশ্বাসের উপর থাকতে হয়। আপনার মা-বাবার ক্ষেত্রেও বিশ্বাসটা সে রকম। এখন আমাদের অবস্থাও এই রকম। আমরাও মনে প্রাণে বিশ্বাস করি আল্লাহ একজন আছেন। তিনি যুগে যুগে নবী-রসুল পাঠিয়েছেন তাঁর বার্তাবাহক হিসেবে। ইহকাল-পরকাল সম্পর্কে মানুষকে জ্ঞান দিয়েছেন। ঐশী গ্রন্থের মাধ্যমে মানুষের বিশ্বাসকে পাকাপোক্ত করেছেন যে, হাশরের কঠিন হিসেবের পর ইহকালীন কৃতকর্মের উপর তারপর তারা পাবেন জান্নাত-জাহান্নাম। কিন্তু উনাদের কথা একটাই আমরা প্রমাণ ছাড়া বিশ্বাস করি না।
কোন কিছু না দেখে বিশ্বাস করি না। তো আপনারা যদি এখন না দেখে বা প্রমাণ ছাড়া বিশ্বাস নাই করেন তাহলে স্রষ্টা কি সবার কাছে এসে এসে দেখা দিয়ে কি আর বলবে এই বান্দা এই দেখো আমি, এবার আমাকে বিশ্বাস করো! এটা কি যৌক্তিক হবে? স্রষ্টা বরং পুরো ইহজগতে তার নিদর্শন দিয়ে রেখেছেন স্রষ্টাকে চিনার জন্য, বিশ্বাসের জন্য। সেসব দেখেই বরং আপনাকে বিশ্বাস করতে হবে। আর এটাই বিশ্বাস। আবার সবাই এক জায়গাই এসে একটা ভুল করে ধর্মকে সায়েন্সের সাথে গুলিয়ে ফেলে। ধর্মকে সায়েন্স দিয়ে ব্যাখ্যা করতে চাই। ধর্মের বিশ্বাসের ক্ষেত্রে প্রমাণ দিতে হয় না। বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে প্রমাণ সাপেক্ষে বিশ্বাসের কথা আসে। সায়েন্সও ভুল থিওরি দিতে পারে। সায়েন্স এর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় কথা হলো সায়েন্স পরিবর্তন হতে পারে। সায়েন্সে শেষ বা ফাইনাল বলে কোন কথা নেই।
দেখা গেছে শত বছর ধরে যেটা সবাই সঠিক বলে যেনে-মেনে আসলো আরেক বিজ্ঞানী এসে আরেক থিওরি দিয়ে সেটা ভুল প্রমাণ করে সে আবার নতুন এক থিওরি দিলো। এবার আবার প্রমাণ সাপেক্ষে সবাই এই বিজ্ঞানীর থিওরি সঠিক হিসেবে মানা শুরু করবে। এটাও আরেক বিজ্ঞানী ভুল প্রমাণ করা পর্যন্ত টিকে থাকবে। আর এটাই হলো সায়েন্স। এটাই সায়েন্সের ধর্ম। উদাহরণ হিসেবে, এই বইয়ের প্রথম অধ্যায় “একজন অবিশ্বাসীর বিশ্বাস” থেকে আমার মত করে একটা উদ্ধৃতি দিচ্ছি- ‘সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘুরে’ এটা ছিলো টলেমী নামের এক বিজ্ঞানীর থিওরি। যা টিকে ছিলো প্রায় ২৫০ বছর। এরপর আরেক বিজ্ঞানী থিওরি দিলো যে সূর্য নয় ‘পৃথিবীই সূর্যের চারিদিকে ঘুরে’। এটাও ভুল ছিলো তারপরেও টিকে ছিলো প্রায় ৫০ বছর। কিন্তু আজকের বিজ্ঞান বলছে ‘শুধু পৃথিবী নয় সূর্যও তার কক্ষপথে অবিরাম ঘুরছে’। এখন চিন্তা করুন, যে থিওরি ২৫০ বছর এবং এর পরের থিওরি ৫০ বছর ভুল তথ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত ছিলো সে সময়কার মানুষ যারা মারা গেছেন তারা এই বিশ্বাস নিয়েই মারা গেছেন যে, ‘সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘুরে’ এবং পরবর্তীতে ‘পৃথিবীই সূর্যের চারিদিক ঘুরে’। এখন ঐশী গ্রন্থ কুরআনের কথায় দরুন, কুরআন সেই ২৫০ বছরের জন্য যে কথা বলেছে আবার পরবর্তী ৫০ বছরের জন্যই সেই একই কথা বলেছে এবং বর্তমানেও সেই হুবহু একই কথা বলে যাচ্ছে।
তাই সব সময় বিজ্ঞান দিয়ে কুরআনকে জাস্টিফাই করা উচিত নয়। সবচেয়ে ভালো লেগেছে তাকদির বিষয়ের গল্পটা। এক স্যার এমন প্রশ্ন করলেন, স্রষ্টা তো আগ থেকেই সব তথা তাকদির লিখে রেখেছেন। এবং মানুষ সে লিখে রাখা অনুযায়ী কাজ করছে। স্রষ্টা কাজ ভালো লিখে রাখলে মানুষ ভালো কাজ করছে বা খারাপ তাকদির লিখে রাখলে খারাপই করেছে। এতে মানুষের দোষ কি? স্রষ্টা যা লিখছে সেই অনুযায়ী তো সে করলো। তারপরেও তাকে কেন স্রষ্টার আগ থেকে লিখে রাখা অনুযায়ী কাজ করার জন্য জাহান্নামে যেতে হবে? গল্পের নায়ক সাজিদ উত্তর দিলো, স্যার আপনি তো জানেন যে, এই ক্লাসের কে কে ফার্স্ট ক্লাস পাবে, কে সেকেন্ড ক্লাস আবার কে কে ফেল করবো। কারণ, আপনি আপনার স্টুডেন্টের অবস্থা ভালো করেই জানেন এবং কার কেমন মেধা সে অনুযায়ী কে কেমন রেজাল্ট করবে সেটা আপনি চোখ বন্ধকরেই লিখে দিতে পারেন। তো দেখা গেলো আপনার কাগজে লিখে রাখা অনুযায়ী সবাই রেজাল্ট করলো।
যারা ফার্স্ট ক্লাস পাবার ফার্স্ট ক্লাস পেলো, সেকেন্ড ক্লাস পাবার তারা সেকেন্ড ক্লাসই পেলো এবং ফেল করার যারা তারা ফেল করলো। এখন যদি ফেল করা স্টুডেন্টরা যদি বলে যে, “স্যার আপনি কাগজে লিখে রেখেছেন বলেই আমরা ফেল করেছি!” তাহলে কি ব্যাপারটা সঠিক হবে বা আপনি মেনে নিবেন? নিশ্চয় এটা সঠিক হবে না। কারণ, শুধু আপনার কাগজে লিখে রাখার উপর তাদের কোন ফলাফল হয়নি।আপনি তো শুধু তাদের মেধা,যোগ্যতা সম্পর্কে ধারণা রাখেন বলেই অগ্রিম বলে দিতে পেরেছেন। আসলে তো তাদের ফলাফল তাদের কৃতকর্মের ফল তথা তাদের পড়াশুনা অনুযায়ীই হয়েছে। আপনার কাগজে লিখে রাখার জন্য হয়নি। ভাগ্যটাও ঠিক এ রকম। সৃষ্টিকর্তা হলেন আলিমুল গায়েব। তিনি তাঁর বান্দার অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সব জানেন।
স্রষ্টা জানেন যে, আপনি আজ সকালে একজনকে খুন করবেন। তাই তিনি সেটা আগেই আপনার তাকদিরে লিখে রেখেছেন। এটার মানে এই নয় যে, স্রষ্টা লিখে রেখেছেন বলেই আপনি খুনটি করেছেন। বরং আপনি আজকে খুন করবেন বলেই সেটা স্রষ্টা লিখে রেখেছেন। বইটি পড়ার পর আমি নিজের মত করে ব্যাখ্যা করা চেষ্টা করেছি। এসব কথা আমার নিজস্ব চিন্তাধারার এবং মস্তিষ্কপ্রসূত। আশা করি ভুল-ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন এবং বইটি পড়বেন। ধন্যবাদ সবাইকে। এবং লেখাটি বড় হয়ে যাওয়ায় দু:খিত। রিভিউ: রাশেদুল হায়দার বই: প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ বই-লেখক: আরিফ আজাদ ‘আরিফ আজাদ’ এর আরেকটি ‘আরজ আলী সমীপে’ নামের বইটিরও আমি রিভিউ লিখেছিলাম। আপনারা চাইলে সেটিও আমার ওয়েব সাইট থেকে পড়ে নিতে পারেন।
‘আরজ আলী সমীপে’ বই টির নিচে ডাউনলোড করার লিঙ্ক আছে
OUR FACEBOOK GROUP LINK click here
Groups | Facebook
নিচে এই বই টির ডাউনলোড করার দুইটি লিঙ্ক আছে এবং প্রিভিউ লিঙ্ক ও আছে
কোনো সমস্যা হলে আমাকে বলবেন নিচে আমার ফেসবুক আইডি এর লিঙ্ক দেওয়া আছে.. যদি কোনো ভুল হয় ভুলের জন্য ক্ষমা করবেন
কবিতায় রিভিউ.."আরজ আলী সমীপে"
আল্লাহ তুমি কবুল করো
মনের স্বপ্ন আশা...
পড়তে যে চাই ভার্সিটিতে..
. গড়তে ভালো পেশা!
কবুল হলো মন্জুর হলো.. এলাম ভার্সিটিতে!
বল্টু দাদা (ভর্সিটির বড়ভাই) কহিলেন মোরে আরজ চাচার বইটা নিতে।
। কহিলাম হেসে 'কিসের বই দাদা??' লেখক কেমন গো?? দাদা কহিলেন পড়তে কইছি পড়বি গিয়ে "এতো কতা কইস নে" সন্ধ্যাশেষে বড়ই উৎসুখে বইটা নিলাম হাতে ...
বাহ !কি দারুন থিওরিগুলো... নাস্তিক হলাম শেষে...!
মনের মধ্যে গভীর চিন্তা কি থেকে কি হলাম...?
যে আল্লাহর কাছে চেয়ে চেয়ে ভার্সিটিতে চান্স পেলাম..!
তাকে আজ ভুলিয়ে দিলো আরজ চাচার থিওরি... যায় কোথায় ??
অস্বস্তি যে .. কোথায় গিয়ে কি করি..!
হঠাৎ একদিন আরেকটা বই সাজিদ দিলো এনে... এইনে পড়তো... বলবি পড়ে তোর আরজ চাচা যায় কনে?"
পড়তে শুরু করলাম বইটা...
একে একে সব পরিষ্কার...
ছি:মূর্খ চাচার বই পড়ে আমি ধর্মকে করতাম তিরষ্কার..!
শিক্ষিত হয়েও ঢুবে গেছিলাম গন্ড মূর্খ আরজ চাচার ফাঁসিতে...
মুক্তি দিলো আল্লাহর রহমত!
মাধ্যম ছিলো আরিফ আজাদের "আরজ আলী সমীপে" যদিও অল্পলেখার কথা বলা আছে হয়তো একটু বড়ই হয়ে গেলো।
আরজ আলী সমীপে বইটা বিশেষ করে যারা বিজ্ঞান সম্পর্কে ভালো জ্ঞান রাখা আর ভার্সিটির ক্যান্টিনে যেয়ে লোহাভাসা সঙ্গদোষে পড়ে নাস্তিক অথবা সংশয়বাদী হয়ে পড়েছে তাদের জন্য হেদায়াতের মাধ্যম হবে বলে মনে করি। সবিশেষ:ছড়িয়ে যাক হেরার জ্যোতির আলোকধারা দিক হতে দিগন্তে 💚ধন্যবাদ সমকামীন প্রকাশনীকে আলোকবর্তিকা ছড়িয়ে দেবার জন্য , উৎসাহ জাগানোর জন্য 💚
0 Comments: