সত্যকথন আরিফ আজাদ pdf সত্যকথন – Sottokothon – ১-৪০০তম পর্ব একসাথে – 1 to 400 – আরিফ আজাদ,  এই বইটি ফ্রি পিডিএফ ডাউনলোড করুন এখনি! – Download free PDF all books from our PDF Library

সত্যকথন আরিফ আজাদ pdf সত্যকথন – Sottokothon – ১-৪০০তম পর্ব একসাথে – 1 to 400 – আরিফ আজাদ, এই বইটি ফ্রি পিডিএফ ডাউনলোড করুন এখনি! – Download free PDF all books from our PDF Library


.




আমি রুমে ঢুকেই দেখি সাজিদ কম্পিউটারের সামনে উবুঁ হয়ে বসে আছে।খটাখট কি যেন টাইপ করছে হয়তো। আমি জগ থেকে পানি ঢালতে লাগলাম। প্রচন্ড রকম তৃষ্ণার্ত।তৃষ্ণায় বুক ফেটে যাবার জোগাড়। সাজিদ কম্পিউটার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,- ‘কি রে, কিছু হইলো?’
.
আমি হতাশ গলায় বললাম,- ‘নাহ।’
.
– ‘তার মানে তোকে একবছর ড্রপ দিতেই হবে?’- সাজিদ জিজ্ঞেস করলো।
আমি বললাম,- ‘কি আর করা। আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন।’
সাজিদ বললো,- ‘তোদের এই এক দোষ,বুঝলি? দেখছিস পুওর এ্যাটেন্ডেন্সের জন্য এক বছর ড্রপ খাওয়াচ্ছে, তার মধ্যেও বলছিস, আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন। ভাই, এইখানে কোন ভালোটা তুই পাইলি,বলতো?’
সাজিদ সম্পর্কে কিছু বলে নেওয়া দরকার।আমি আর সাজিদ রুমমেট। সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাইক্রো বায়োলজিতে পড়ে।প্রথম জীবনে খুব ধার্মিক ছিলো।নামাজ-কালাম করতো।বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে কিভাবে কিভাবে যেন এগনোষ্টিক হয়ে পড়ে। আস্তে আস্তে স্রষ্টার উপর থেকে বিশ্বাস হারিয়ে এখন পুরোপুরি নাস্তিক হয়ে গেছে।ধর্মকে এখন সে আবর্জনা জ্ঞান করে।তার মতে পৃথিবীতে ধর্ম এনেছে মানুষ।আর ‘ইশ্বর’ ধারনাটাই এইরকম স্বার্থান্বেষী কোন মহলের মস্তিষ্কপ্রসূত।
.
সাজিদের সাথে এই মূহুর্তে তর্কে জড়াবার কোন ইচ্ছে আমার নেই। কিন্তু তাকে একদম ইগনোর করেও যাওয়া যায়না।
.
আমি বললাম,- ‘আমার সাথে তো এর থেকেও খারাপ কিছু হতে পারতো,ঠিক না?’
– ‘আরে, খারাপ হবার আর কিছু বাকি আছে কি?’
— ‘হয়তো।’
– ‘যেমন?’
– ‘এরকমও তো হতে পারতো,ধর, আমি সারাবছর একদমই পড়াশুনা করলাম না।পরীক্ষায় ফেইল মারলাম।এখন ফেইল করলে আমার এক বছর ড্রপ যেতো।হয়তো ফেইলের অপমানটা আমি নিতে পারতাম না।আত্মহত্যা করে বসতাম।’
সাজিদ হা হা হা হা করে হাসা শুরু করলো। বললো,- ‘কি বিদঘুটে বিশ্বাস নিয়ে চলিস রে ভাই।’
এই বলে সে আবার হাসা শুরু করলো।বিদ্রুপাত্মক হাসি।
রাতে সাজিদের সাথে আমার আরো একদফা তর্ক হোলো।
.
সে বললো,- ‘আচ্ছা, তোরা যে স্রষ্টায় বিশ্বাস করিস, কিসের ভিত্তিতে?’
আমি বললাম,- ‘বিশ্বাস দু ধরনের। একটা হোলো, প্রমানের ভিত্তিতে বিশ্বাস।অনেকটা,শর্তারোপে বিশ্বাস বলা যায়। অন্যটি হোলো প্রমান ছাড়াই বিশ্বাস।’
সাজিদ হাসলো। সে বললো,- ‘দ্বিতীয় ক্যাটাগরিকে সোজা বাঙলায় অন্ধ বিশ্বাস বলে রে আবুল,বুঝলি?’
আমি তার কথায় কান দিলাম না। বলে যেতে লাগলাম-
.
‘প্রমানের ভিত্তিতে যে বিশ্বাস, সেটা মূলত বিশ্বাসের মধ্যে পড়েনা।পড়লেও, খুবই ট্যাম্পোরেরি। এই বিশ্বাস এতই দূর্বল যে, এটা হঠাৎ হঠাৎ পালটায়।’
সাজিদ এবার নড়েচড়ে বসলো। সে বললো,- ‘কি রকম?’
আমি বললাম,- ‘এই যেমন ধর,সূর্য আর পৃথিবীকে নিয়ে মানুষের একটি আদিম কৌতূহল আছে। আমরা আদিকাল থেকেই এদের নিয়ে জানতে চেয়েছি, ঠিক না?’
– ‘হু, ঠিক।’
– ‘আমাদের কৌতূহল মেটাতে বিজ্ঞান আপ্রাণ চেষ্টা করে গেছে, ঠিক?’
– ‘হ্যাঁ।’
– ‘আমরা একাট্টা ছিলাম। আমরা নির্ভুলভাবে জানতে চাইতাম যে, সূর্য আর পৃথিবীর রহস্যটা আসলে কি। সেই সুবাধে, পৃথিবীর বিজ্ঞানীরা নানান সময়ে নানান তত্ব আমাদের সামনে এনেছেন। পৃথিবী আর সূর্য নিয়ে প্রথম ধারনা দিয়েছিলেন গ্রিক জ্যোতির বিজ্ঞানি টলেমি।টলেমি কি বলেছিলো সেটা নিশ্চয় তুই জানিস?’
সাজিদ বললো,- ‘হ্যাঁ। সে বলেছিলো সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘুরে।’
– ‘একদম তাই। কিন্তু বিজ্ঞান কি আজও টলেমির থিওরিতে বসে আছে? নেই। কিন্তু কি জানিস, এই টলেমির থিওরিটা বিজ্ঞান মহলে টিকে ছিলো পুরো ২৫০ বছর। ভাবতে পারিস? ২৫০ বছর পৃথিবীর মানুষ, যাদের মধ্যে আবার বড় বড় বিজ্ঞানি, ডাক্তার,ইঞ্জিনিয়ার ছিলো, তারাও বিশ্বাস করতো যে, সূর্য পৃথিবীর চারপাশে ঘোরে।
এই ২৫০ বছরে তাদের মধ্যে যারা যারা মারা গেছে, তারা এই বিশ্বাস নিয়েই মারা গেছে যে, সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘোরে।’
.
সাজিদ সিগারেট ধরালো। সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে বললো,- ‘তাতে কি? তখন তো আর টেলিস্কোপ ছিলো না, তাই ভুল মতবাদ দিয়েছে আর কি। পরে নিকোলাস কোপারনিকাস এসে তার থিওরিকে ভুল প্রমান করলো না?’
– ‘হ্যাঁ। কিন্তু কোপারনিকাসও একটা মস্তবড় ভুল করে গেছে।’
সাজিদ প্রশ্ন করলো,- ‘কি রকম?’
– ‘অদ্ভুত! এটা তো তোর জানার কথা। যদিও কোপারনিকাস টলেমির থিওরির বিপরীত থিওরি দিয়ে প্রমান করে দেখিয়েছিলেন যে, সূর্য পৃথিবীর চারপাশে নয়, পৃথিবীই সূর্যের চারপাশে ঘোরে।কিন্তু, তিনি এক জায়গায় ভুল করেন।এবং সেই ভুলটাও বিজ্ঞান মহলে বীরদর্পে টিকে ছিলো গোটা ৫০ বছর।’
– ‘কোন ভুল?’
– ‘উনি বলেছিলেন, পৃথিবীই সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘোরে, কিন্তু সূর্য ঘোরে না। সূর্য স্থির। কিন্তু আজকের বিজ্ঞান বলে, – নাহ, সূর্য স্থির নয়। সূর্যও নিজের কক্ষপথে অবিরাম ঘূর্ণনরত অবস্থায়।’
সাজিদ বললো,- ‘সেটা ঠিক বলেছিস। কিন্তু বিজ্ঞানের এটাই নিয়ম যে, এটা প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হবে। এখানে শেষ বা ফাইনাল বলে কিছুই নেই।’
– ‘একদম তাই। বিজ্ঞানে শেষ/ফাইনাল বলে কিছু নেই। একটা বৈজ্ঞানিক থিওরি ২ সেকেন্ডও টেকে না, আবার আরেকটা ২০০ বছরও টিকে যায়। তাই, প্রমান বা দলিল দিয়ে যা বিশ্বাস করা হয় তাকে আমরা বিশ্বাস বলিনা।এটাকে আমরা বড়জোর চুক্তি বলতে পারি। চুক্তিটা এরকম,- ‘তোমায় ততোক্ষণ বিশ্বাস করবো, যতক্ষণ তোমার চেয়ে অথেনটিক কিছু আমাদের সামনে না আসছে।’
.
সাজিদ আবার নড়েচড়ে বসলো। সে কিছুটা একমত হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।
.
আমি বললাম,- ‘ধর্ম বা সৃষ্টিকর্তার ধারনা/অস্তিত্ব হচ্ছে ঠিক এর বিপরীত। দ্যাখ, বিশ্বাস আর অবিশ্বাসের মধ্যকার এই গূঢ় পার্থক্য আছে বলেই আমাদের ধর্মগ্রন্থের শুরুতেই বিশ্বাসের কথা বলা আছে। বলা আছে- ‘এটা তাদের জন্য যারা বিশ্বাস করে।’ (সূরা বাকারা,০২)।
.
যদি বিজ্ঞানে শেষ বা ফাইনাল কিছু থাকতো, তাহলে হয়তো ধর্মগ্রন্থের শুরুতে বিশ্বাসের বদলে বিজ্ঞানের কথাই বলা হতো। হয়তো বলা হতো,- ‘এটা তাদের জন্যই যারা বিজ্ঞানমনষ্ক।’
কিন্তু যে বিজ্ঞান সদা পরিবর্তনশীল, যে বিজ্ঞানের নিজের উপর নিজেরই বিশ্বাস নেই, তাকে কিভাবে অন্যরা বিশ্বাস করবে?’
.
সাজিদ বললো,- ‘কিন্তু যাকে দেখিনা, যার পক্ষে কোন প্রমান নেই, তাকে কি করে আমরা বিশ্বাস করতে পারি?’
– ‘সৃষ্টিকর্তার পক্ষে অনেক প্রমান আছে, কিন্তু সেটা বিজ্ঞান পুরোপুরি দিতে পারেনা।এটা বিজ্ঞানের সীমাবদ্ধতা, সৃষ্টিকর্তার নয়।বিজ্ঞান অনেক কিছুরই উত্তর দিতে পারেনা। লিষ্ট করতে গেলে অনেক লম্বা একটা লিষ্ট করা যাবে।’
.
সাজিদ রাগি রাগি গলায় বললো,- ‘ফাইজলামো করিস আমার সাথে?’
আমি হাসতে লাগলাম। বললাম,- ‘আচ্ছা শোন, বলছি। তোর প্রেমিকার নাম মিতু না?’
– ‘এইখানে প্রেমিকার ব্যাপার আসছে কেনো?’
– ‘আরে বল না আগে।’
– ‘হ্যাঁ।’
– ‘কিছু মনে করিস না। কথার কথা বলছি। ধর, আমি মিতুকে ধর্ষণ করলাম। রক্তাক্ত অবস্থায় মিতু তার বেডে পড়ে আছে। আরো ধর, তুই কোনভাবে ব্যাপারটা জেনে গেছিস।’
– ‘হু।’
– ‘এখন বিজ্ঞান দিয়ে ব্যাখ্যা কর দেখি, মিতুকে ধর্ষণ করায় কেনো আমার শাস্তি হওয়া দরকার?’
সাজিদ বললো,- ‘ক্রিটিক্যাল কোয়েশ্চান। এটাকে বিজ্ঞান দিয়ে কিভাবে
ব্যাখ্যা করবো?’
– ‘হা হা হা। আগেই বলেছি। এমন অনেক ব্যাপার আছে, যার উত্তর বিজ্ঞানে নেই।’
– ‘কিন্তু এর সাথে স্রষ্টায় বিশ্বাসের সম্পর্ক কি?’
– ‘সম্পর্ক আছে। স্রষ্টায় বিশ্বাসটাও এমন একটা বিষয়, যেটা আমরা, মানে মানুষেরা, আমাদের ইন্দ্রিয় গ্রাহ্য প্রমানাদি দিয়ে প্রমান করতে পারবো না। স্রষ্টা কোন টেলিষ্কোপে ধরা পড়েন না।উনাকে অণুবীক্ষণযন্ত্র দিয়েও খুঁজে বের করা যায়না। উনাকে জাষ্ট ‘বিশ্বাস করে নিতে হয়।’
.
সাজিদ এবার ১৮০ ডিগ্রি এঙ্গেলে বেঁকে বসলো। সে বললো,- ‘ধুর! কিসব বাল ছাল বুঝালি। যা দেখিনা, তাকে বিশ্বাস করে নেবো?’
আমি বললাম,- ‘হ্যাঁ। পৃথিবীতে অবিশ্বাসী বলে কেউই নেই। সবাই বিশ্বাসী। সবাই এমন কিছু না কিছুতে ঠিক বিশ্বাস করে, যা তারা আদৌ দেখেনি বা দেখার কোন সুযোগও নেই।কিন্তু এটা নিয়ে তারা প্রশ্ন তুলে না। তারা নির্বিঘ্নে তাতে বিশ্বাস করে যায়। তুইও সেরকম।’
.
সাজিদ বললো,- ‘আমি? পাগল হয়েছিস? আমি না দেখে কোন কিছুতেই বিশ্বাস করিনা, করবোও না।’
– ‘তুই করিস।এবং, এটা নিয়ে তোর মধ্যে কোনদিন কোন প্রশ্ন জাগে নি।এবং, আজকে এই আলোচনা না করলে হয়তো জাগতোও না।’
.
সে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। বললাম,- ‘জানতে চাস?’
– ‘হু।’
– ‘আবার বলছি, কিছু মনে করিস না। যুক্তির খাতিরে বলছি।’
– ‘বল।’
– ‘আচ্ছা, তোর বাবা-মা’র মিলনেই যে তোর জন্ম হয়েছে, সেটা তুই দেখেছিলি? বা,এই মূহুর্তে কোন এভিডেন্স আছে তোর কাছে? হতে পারে তোর মা তোর বাবা ছাড়া অন্য কারো সাথে দৈহিক সম্পর্ক করেছে তোর জন্মের আগে। হতে পারে, তুই ঐ ব্যক্তিরই জৈব ক্রিয়ার ফল।তুই এটা দেখিস নি।
.
কিন্তু কোনদিনও কি তোর মা’কে এটা নিয়ে প্রশ্ন করেছিলি? করিস নি। সেই ছোটবেলা থেকে যাকে বাবা হিসেবে দেখে আসছিস, এখনো তাকে বাবা ডাকছিস। যাকে ভাই হিসেবে জেনে আসছিস, তাকে ভাই।বোনকে বোন।
.
তুই না দেখেই এসবে বিশ্বাস করিস না? কোনদিন জানতে চেয়েছিস তুই এখন যাকে বাবা ডাকছিস, তুই আসলেই তার ঔরসজাত কিনা? জানতে চাস নি। বিশ্বাস করে গেছিস।এখনো করছিস। ভবিষ্যতেও করবি। স্রষ্টার অস্তিত্বে বিশ্বাসটাও ঠিক এমনই রে।এটাকে প্রশ্ন করা যায়না। সন্দেহ করা যায়না। এটাকে হৃদয়ের গভীরে ধারন করতে হয়। এটার নামই বিশ্বাস।’
সাজিদ উঠে বাইরে চলে গেলো। ভাবলাম, সে আমার কথায় কষ্ট পেয়েছে হয়তো।
পরেরদিন ভোরে আমি যখন ফজরের নামাজের জন্য অযূ করতে যাবো, দেখলাম, আমার পাশে সাজিদ এসে দাঁড়িয়েছে।আমি তার মুখের দিকে তাকালাম।সে আমার চাহনির প্রশ্নটা বুঝতে পেরেছে। সে বললো,- ‘নামাজ পড়তে উঠেছি।’
.
‘একজন অবিশ্বাসীর বিশ্বাস’
লেখকঃ আরিফ আজাদ







প্রিয় বন্ধুটা সেদিন বাসায় এসে বলছিল–“তোর দেয়া স্ট্যাটাসটা পড়লাম। আরে, যে আপুটার বদলে যাওয়ার গল্প লিখলি তার চেয়ে তোর বদলানোর গল্পটা তো আরও বেশি আকর্ষণীয় ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম দুই বছরে তুই কী ছিলি, আর শেষ দুই বছরে এসে কী হলি, সেটা শেয়ার কর।”

আমার ইতস্তত লাগে বলতে। এ যে একান্তই নিজের করা যুদ্ধের কথা। একা একা ভুল পথে, ভুল গলিতে হন্যে হয়ে হেটে বেড়ানো আর বার বার হোঁচট খাওয়ার গল্প বলতে কার ভালো লাগে! ভুলে ভরা নষ্ট অতীত তো বহু আগেই ছুড়ে ফেলেছি। পুনরায় তা খুঁড়ে বের করে পরিবেশ দুর্গন্ধ করার কী দরকার! পরে ভাবলাম, এই অতীতই তো আমার শক্তি, আমার এগিয়ে চলার সাহস আর প্রেরণা । এই গল্প যদি কাউকে জীবনের দুর্গম পথ মাড়ানোর খানিকটা সাহস যগায়, কেউ যদি এই গল্লের উদ্ভাসে সত্যের পথে চলার এবং সত্যের জন্যে আপসহীন হওয়ার অনুপ্রেরণা পেয়ে যায়_তাহলে তা তো হবে আমার জন্য বিরাট সার্থকতা ও অনন্য প্রাপ্তি। বলা তো যায় না, কোন গল্প কখন কার হৃদয় ছুঁয়ে যায় আর তার মনমানসে বিপ্লব ও পরিবর্তনের আকুল ঝড় তোলে! সেই ছোট্টবেলা থেকেই আমার অবারিত বই গলাধঃ$করণের অভ্যাস। সবাই মাঠে খেলতো, পর্দায় খেলা দেখতো, আর আমি নিশ্ুপ বইয়ের পর বই গলাধঃকরণ করতাম। বন্ধুরা আড্ডা দিতো, আমি বইয়ের জলতরঙ্গে অবগাহন জলরাশিতে নিরবধি সাঁতার কাটতাম, ডুবুরির মতো অতল গভীরে ডুব দিয়ে ঝিনুকের দেহ চিড়ে চিড়ে মুক্তা বের করে আনতাম। অশেষ পানির বুকে হাত-

উপরে উল্লেখিত বইটির ফ্রি পিডিএফ ডাউনলোড করুন নিচের ডাইরেক্ট লিঙ্ক থেকে। যদি কোনো সমস্যা হয়, কমেন্ট করে জানাবেন।






নাস্তিক ও সংশয়বাদীদের আরেকটি বহুল ব্যবহৃত যুক্তি হল উত্তরাধিকারসূত্রে ধর্মবিশ্বাস লাভ করার “যুক্তি”। “যুক্তিটা” অনেকটা এরকম –
.
“ধর্ম তো জন্মসূত্রে পাওয়া। হিন্দুর ঘরে জন্মে আজ যে হিন্দু পূজা পালন করে, সে যদি খ্রিষ্টানের ঘরে জন্ম নিত তাহলে ক্রিসমাস পালন করতো। মুসলিমের ঘরে জন্মালে এই একই লোক নামায পড়তো। ব্যক্তির জন্মই তার ধর্মবিশ্বাসকে নির্ধারিত করে দেয়। সবাই নিজ নিজ ধর্মকেই ঠিক মনে করে...”
.
মূলত এটাই হল এই “যুক্তির” ভাষ্য। এইটুকু বলার পর নাস্তিকরা তাদের ধরাবাঁধা মুখস্থ কথায় চলে যায়। সব ধর্মই মিথ্যা। স্রষ্টা বলে আসলে কিছু নেই। বিশ্বাসীরা আসলে বোকা। কাল্পনিক বিশ্বাস নিয়ে থাকে...ইত্যাদি।
.
ডকিন্স, ক্রাউস, হ্যারিস থেকে শুরু করে আরজ আলি মাতুব্বর এবং ফেইসবুকের বিভিন্ন পোষ্টে এলেমেলো কমেন্ট করে নিজের প্রতিভার প্রমান রাখতে চাওয়া উঠতি নাস্তিক – সবাই বিভিন্ন ভাবে এই “যুক্তিটি” ব্যবহার করে।
.
নাস্তিকদের অন্যান্য “যুক্তি”গুলোর মতো এই “যুক্তিটিরও” লক্ষ্য হল একাধিক অপ্রাসঙ্গিক বিষয়কে একত্রিত করে ইচ্ছেমতো একটা উপসংহার দাঁড় করানো এবং নাস্তিকদের অন্যান্য “যুক্তির” মতো এই যুক্তিও কোন কিছুকে সঠিক বা ভুল বলে প্রমান করে না।
.
যদি আমরা ধাপে ধাপে বিষয়টা নিয়ে চিন্তা করি তাহলে এক্ষেত্রে নাস্তিকদের বক্তব্য হল নিম্নরূপঃ
.
১) আপনি ধর্মে বিশ্বাস করেন
২) আপনার এই বিশ্বাস উত্তরাধিকারসূত্রে (বা পরিবার থেকে পাওয়া) পাওয়া
৩) অতএব আপনার ধর্মবিশ্বাস ভুল
.
কিন্তু যদি আপনি আসলে যুক্তির অনুসরণ করেন তাহলে দেখবেন ২ থেকে কোনভাবেই কিন্তু ৩ নং ধাপে পৌছানো যায় না। যেমন উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সবকিছুই কি ভুল? পরিবার থেকে আমরা দুইয়ের নামতা বা বর্ণমালা শিখি - এগুলো কি ভুল?
.
হতে পারে পরিবার থেকে আমরা যা কিছু শিখি তার কিছু কিছু ভুল। হতে পারে যে পরিবার থেকে আমরা যা কিছু শিখি তার অধিকাংশই ভুল। কিন্তু পরিবার থেকে আমরা যা কিছুই শিখি তার সবই আবশ্যকভাবে (necessarily) ভুল - এমন কি বলা যায়?
.
অবশ্যই না।
.
কোন বিশ্বাস একজন মানুষ ঠিক কোন উৎস (source) থেকে অর্জন করছে তা কি সেই বিশ্বাসের সঠিক বা ভুল হওয়াকে নির্ধারন করে দেয়? অর্থাৎ আমি একটা বিশ্বাস কিভাবে অর্জন করেছি তার সাথে আমার বিশ্বাস সঠিক বা ভুল হবার সম্পর্ক কি? আমার বিশ্বাস এর উৎস আর আমার আমার বিশ্বাসের সঠিক বা ভুল হওয়া – এদুটি দুটো আলাদা বিষয়।
.
ধরুন ঢাকার কোন এক বস্তির কোন এক খুপরি ঘরে কোন এক মা তার ৭ বছর বয়েসই বাচ্চাকে বলছেন – জানো পৃথিবিতে এমন কিছু জায়গা আছে যেখানে শীতকালে আকাশ থেকে দানা দানা তুষার পড়ে?
.
ধরে নিন বস্তিনিবাসী এই মায়ের সন্তান তার মায়ের এই কথাটি বিশ্বাস করে নিল। এবং সারাজীবনে একবারও চোখের সামনে তুষারপাত না দেখলেও সে এই কথাকে সারাজীবন সত্য বলে বিশ্বাস করলো।
.
এ থেকে কি প্রমাণিত হয় তার এই বিশ্বাস ভুল, যেহেতু সে পরিবার থেকে এই বিশ্বাস পেয়েছে? পৃথিবীর কোন কোন জায়গায় তুষারপাত হয় – এই বিষয়টির সঠিক হওয়া বা না হওয়ার সাথে কি আদৌ কোন উৎস থেকে বিশ্বাসটা আসছে তার কোন সম্পর্কে আছে?
.
আচ্ছা, যদি যুবক বয়সে পরিবার থেকে পাওয়া এই বিশ্বাসকে এই ছেলেটা অস্বীকার করে – কারন এটা উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া বিশ্বাস – তাহলে কি পৃথিবিতে তুষারপাত বন্ধ হয়ে যাবে?
.
ইন ফ্যাক্ট কোন কিছু কি আপনি যৌক্তিক কারনে বিশ্বাস করেন নাকি অন্ধভাবে বিশ্বাস করে সেটা দিয়েও কিন্তু সেই বিশ্বাসের সত্য বা মিথ্যা হওয়াকে প্রমান করা যায় না। যদি কোন সত্যকে আমি অন্ধভাবে বিশ্বাস করি তাহলে কি সেই সত্য মিথ্যা হয়ে যাবে?
.
ধরুন একজন জন্মান্ধ ব্যক্তিকে বলা হল - গাছের পাতা সবুজ। যদি লোকটি এই কথাটি বিশ্বাস করে তাহলে আক্ষরিক ভাবেই তার বিশ্বাস একটি অন্ধ বিশ্বাস। কিন্তু তার মানে কি এই বিশ্বাস ভুল? লোকটি অন্ধভাবে বিশ্বাস করছে তাই বলে কি গাছের পাতা সবুজ এটা মিথ্যা হয়ে যাবে?
.
কোনো একজন মানুষ কোন উৎস থেকে একটি বিশ্বাস পাচ্ছে এ থেকে সর্বোচ্চ ঐ ব্যক্তির বিশ্বাসের ধরন সম্পর্কে কোন মন্তব্য করা যেতে পারে। কিন্তু ঐ বিশ্বাসের ঠিক হওয়া বা না হওয়ার সাথে কোন উৎস থেকে বিশ্বাসটা আসছে তার কোন সম্পর্ক নেই। এ সবকিছুই উক্ত ব্যক্তির বিশ্বাসের ধরনের সাথে সম্পর্কিত কিন্তু কোন কিছুই ঐ বিশ্বাসের সঠিক হওয়া বা না হওয়ার পক্ষে বা বিপক্ষে প্রমাণ না।
.
নাস্তিকরা ঠিক এই জিনিসটাই দাবি করছেন। তাদের এই যুক্তিকে যদি স্পেসিফিক থেকে জেনারেল ফর্মে আনা হয় তাহলে আমরা পাইঃ
.
১) একজন ব্যক্তি বিশ্বাস করে “ক” - এর অস্তিত্ব আছে
২) এই বিশ্বাস সে পেয়েছে উৎস “খ” থেকে
৩) তার মানে “ক” এর অস্তিত্ব নেই
.
যদি আমরা ৩-কে সত্য প্রমাণ করতে চাই তাহলে আমাদের হয় “ক” এর অনস্তিত্বকে প্রমান করতে হবে, অথবা “ক” এর অস্তিত্বের বিরুদ্ধে কোন প্রমাণ আনতে হবে। কিন্তু যৌক্তিকভাবে ২নং ধাপ থেকে ৩নং ধাপে যাবার কোন পথ নেই।
.
এক্ষেত্রে দুটি অপ্রাসঙ্গিক বিষয়কে – কোনো বিশ্বাস বা দাবির উৎস (origin or source of belief/claim) এবং বিশ্বাসের সঠিক হওয়া (whether the belief/claim is true or false) – একত্রিত করা হচ্ছে। এটি একটি বহুল ব্যবহৃত লজিকাল ফ্যালাসি এবং এটা এতোটাই বহুল ব্যবহৃত যে এই ধরনের ফ্যালাসির আলাদা একটা নাম আছে – Fallacy of origins.
.
কিভাবে একজন মানুষ “স্রষ্টা নেই” – এই দাবি প্রমান করার জন্য এই যুক্তি ব্যবহার করতে পারে তা ঠিক বোধগম্য না। কিভাবে একজন মানুষ – “তোমার ধর্ম ভুল, কারন তুমি পরিবার থেকে তোমার ধর্মবিশ্বাস পেয়েছো” – এই যুক্তি সুস্থ মস্তিস্কে বিশ্বাস করতে পারে এটাও ঠিক বোধগম্য না। সম্ভবত নাস্তিকরা এই কথার মাধ্যমে নিজেদেরকে “স্পেশাল” প্রমান করতে চান।
.
“দেখো সবাই পরিবারের বিশ্বাস গ্রহন করেছে, কিন্তু আমি পরিবারের বিশ্বাস ত্যাগ করেছি” – এই জাতীয় কিছু ভেবে হয়তো তারা নিজেদের বিশেষায়িত মনে করতে চান। কিন্তু বাস্তবতা হল, ঠিক যেইভাবে পরিবার থেকে পাওয়ার কারনে কোন বিশ্বাস মিথ্যা হয়ে যায় না, ঠিক তেমনিভাবে পরিবারের বিশ্বাস ত্যাগ করার মানেই অটোম্যাটিকালি সত্যকে খুঁজে পাওয়া না।
.
পরিবার থেকে পাওয়া বিশ্বাস বা তথ্য ভুলও হতে পারে ঠিকও হতে পারে। কিন্তু নিছক পরিবার থেকে পাওয়া – এটাই কোন কিছুর ভুল বা সঠিক হবার ব্যাপারে প্রমান না। নাস্তিকরা যদি বলতে চায় স্রষ্টা নেই – তাহলে তাদের এ বিষয়ে প্রমাণ উপস্থাপন করতে হবে। কেউ কোন কিছু কেন বিশ্বাস করে, কিভাবে বিশ্বাস করে, কিভাবে সে এই বিশ্বাস অর্জন করলো - স্রষ্টার অনস্তিত্ব প্রমাণ করার ক্ষেত্রে এগুলো অপ্রাসঙ্গিক।
.
একইভাবে যদি নাস্তিকরা দাবি করে অমুক ধর্ম ভুল তাহলে তাদেরকে সেই দাবির পক্ষে প্রমাণ আনতে হবে। কিন্তু নাস্তিকরা যুক্তির কথা খুব করে বললেও, যুক্তি-যুক্তি খেলতে চাইলেও সত্যিকার ভাবে যুক্তির ব্যবহার তারা করতে পারে না। আর তারা ধর্ম বিশ্বাসের ব্যাপারে বারবার প্রমাণের কথা বললেও নিজেদের দাবির পক্ষে বলা চলে কখনোই প্রমাণ উপস্থাপন করে না। গত প্রায় এক শতাব্দীতে নাস্তিকতায় বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন এসেছে, কিন্তু এই বৈশিষ্ট্যটি অপরিবর্তিত আছে। নাস্তিকরা তাদের দাবির পক্ষ কোন যুক্তি পেশ করে না, কিন্তু নিজেদের দাবিকে (“স্রষ্টা নেই”) যৌক্তিক বলে দাবি করে।
.
তারা বিশ্বাসের সমালোচনায় বারবার অন্ধবিশ্বাসের কথা আনে কিন্তু তারা নিজেরাই অন্ধভাবে একটি অপ্রমাণিত, অবৈজ্ঞানিক এবং অযৌক্তিক বিশ্বাস লালন করে। আর সবচেয়ে বিচিত্র ব্যাপার হল যুক্তি-প্রমাণ-বিজ্ঞানের স্তুতি গাওয়া এই নাস্তিকদের তথাকথিত “যুক্তি”গুলো হতাশাজনক রকমের শিশুসুলভ এবং মোটা দাগের বুদ্ধিবৃত্তিক হাতসাফাই ছাড়া কিছুই না। নাস্তিকদের সমস্ত আর্গুমেন্ট তৈরি করা মানুষের মধ্যে সংশয় তৈরি করা, মানুষকে ভ্যাবাচ্যাকা খাইয়ে দেওয়া, মানুষের মধ্যে আবেগময় প্রতিক্রিয়া সৃষ্টির জন্য – কিন্তু নিজ অবস্থানের সমর্থনে কোন নিরেট যৌক্তিক বা সায়েন্টিফিক আলোচনা তাদের কথায় নেই। আশ্চর্যজনক বিষয় হল এই জোড়াতালি দেওয়া কুযুক্তি উপস্থাপন করে তারা নিজেদের “বুদ্ধিমত্তার শিখরে আরোহনকারী” জাতীয় কিছু মনে করে এবং অবলীলায় সবাইকে আক্রমণ করে যায়। আবার এরাই মানুষকে মানবতার কথা শেখাতে চায়।
.
তাই বারবার ভাঙ্গা টেপের মতো এই লজিকাল ফ্যালাসিটা রিপিট করে যাওয়া বাঙ্গালী “মুক্তমনা”, নাস্তিক, ইসলামবিদ্বেষী, “সুশীল”-দের জন্য আমার একটা পাল্টা প্রশ্ন আছে।
.
আমরা জানি ৭১ সালের যুদ্ধে দুটো পক্ষ ছিল। (যদিও অনেকে বলে পক্ষ ছিল ৩টি কিন্তু আমরা আপাতত দুটিই ধরে নেই)
.
এই দুটো পক্ষের মধ্যে কোন পক্ষটি সঠিক ছিল?
প্রায় নিশ্চিতভাবেই জবাব আসবে – বাঙ্গালীরা সঠিক অবস্থানে ছিল।
কিন্তু একই প্রশ্ন যদি কোন পাঞ্জাবী বা পাকিস্তানীকে করা হয় তবে সে জবাব দেবে – “পাঞ্জাবীরা সঠিক অবস্থানে ছিল। বাঙ্গালীরা গাদ্দার ছিল।”
.
আমরা বাঙ্গালী হবার কারনে আমরা বিশ্বাস করছি ৭১ এর যুদ্ধে বাঙ্গালীরাই সঠিক অবস্থানে ছিল। যদি আমরা পাঞ্জাবী হতাম তাহলে আমরাই বলতাম - বাঙ্গালীরা গাদ্দার, পাঞ্জাবী আর্মিও সঠিক অবস্থানে ছিল।
.
৭১ এর যুদ্ধ সম্পর্কে আমাদের অবস্থান বাঙ্গালী হিসেবে জাতীয়তা সূত্রে পাওয়া একটি বিশ্বাস।
.
এখন প্রশ্ন হল, মুসলিম পরিবারের জন্মগ্রহন করে কেউ মুসলিম হওয়ার কারনে যদি ইসলাম ধর্ম ভুল হয়, তাহলে নিশ্চয় এটাও বলা যায় যে জাতীয়তার কারনে ৭১ এর ব্যাপারে বাঙ্গালী হিসেবে আমরা যে উপসংহার দিচ্ছি তাও ভুল? অর্থাৎ বাঙ্গালী হবার কারনে বাঙ্গালীদের অবস্থান সঠিক ছিল বলে আমরা যে মত দিচ্ছি সেটাও ভুল?
.
একইভাবে পাঞ্জাবী হবার কারনে পাঞ্জাবীদের অবস্থান সঠিক ছিল বলে পাঞ্জাবীরা যে উত্তর দেবে সেটাও ভুল। সুতরাং এই যুদ্ধে আসলে কোন পক্ষই সঠিক ছিল না। দুই পক্ষই ভুল ছিল। পাকিস্তানি আর্মি যদি যুদ্ধে অংশগ্রহন করে মানবতাবিরোধী অপরাধ করে তাহলে বাঙ্গালীরাও যুদ্ধে অংশগ্রহন করে অপরাধ করেছে।
.
এই উপসংহার কি কোন “মুক্তমনা”, “সুশীল”, নাস্তিক মেনে নেবে?
===========================
নাস্তিকতার বুদ্ধিবৃত্তিক হাতসাফাই ২ - “কিন্তু তোমার ধর্ম তো উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া”
লেখকঃ আসিফ আদনান

\




বিরাট আলিশান একটি বাড়ি। মোঘল আমলের সম্রাটেরা যেরকম বাড়ি বানাতো, অনেকটাই সেরকম। বাড়ির সামনে দৃষ্টিনন্দন একটি ফুলের বাগান। ফুলের বাগানের মাঝে ছোট ছোট কৃত্রিম ঝর্ণা আছে। এই বাড়ির মালিকের রুচিবোধের প্রশংসা করতেই হয়। ঝঞ্চাট ঢাকা শহরের মধ্যে এটি যেন এক টুকরো স্বর্গখন্ড।
.
কিন্তু অবাক করা ব্যাপার হলো, বাগানের কোথাও লাল রঙের কোন ফুল নেই।এতবড় বাগানবাড়ি, অথচ, কোথাও একটি গোলাপের চারা পর্যন্ত নেই। বিস্ময়ের ব্যাপার তো বটেই।
আমরা এসেছি সাজিদের এক দূর সম্পর্কের খালুর বাসায়। ঢাকা শহরে বড় বড় ব্যবসা আছে।বিদেশেও নিজের ব্যবসা-বাণিজ্যের শাখা-প্রশাখা ছড়িয়েছেন। ছেলে-মেয়েদের কেউ লন্ডন, কেউ কানাডা আর কেউ সুইজারল্যান্ড থাকে। ভদ্রলোক উনার স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকাতেই রয়ে গেছেন কেবল শিকড়ের টানে।
.
তবে, ঢাকায় নিজের বাড়িখানাকে যেভাবে তৈরি করেছেন, বোঝার উপায় নেই যে এটি ঢাকার কোন বাড়ি নাকি মস্কোর কোন ভি আই পি ভবন।
আমাকে এদিক-সেদিক তাকাতে দেখে সাজিদ প্রশ্ন করলো,- ‘এভাবে চোরের মতো এদিক-ওদিক তাকাচ্ছিস কেনো?’
.
আমি ভ্যাবাচেকা খাওয়ার মতো করে বললাম,- ‘না, আসলে তোর খালুকে নিয়ে ভাবছি।’
– ‘উনাকে নিয়ে ভাবার কি আছে?’
আমি বললাম,- ‘অসুস্থ মানুষদের নিয়ে ভাবতে হয়।এটাও একপ্রকার মানবতা, বুঝলি?’
সাজিদ আমার দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে বললো,- ‘অসুস্থ মানে? কে অসুস্থ?’
– ‘তোর খালু।’
– ‘তোকে কে বললো উনি অসুস্থ?’
আমি দাঁড়ালাম। বললাম,- ‘তুই এতকিছু খেয়াল করিস, এটা করিস নি?’
– ‘কোনটা?
– ‘তোর খালুর বাগানের কোথাও কিন্তু লাল রঙের কোন ফুলগাছ নেই। প্রায় সব রঙের ফুলগাছ আছে, লাল ছাড়া।এমনকি, গোলাপের একটি চারাও নেই।’
– ‘তো?’
– ‘তো আর কি? তিনি হয়তো কালার ব্লাইন্ড। স্পেশেফিকলি, রেড কালার ব্লাইন্ড।’
সাজিদ কিছু বললো না। হয়তো সে এটা নিয়ে আর কোন কথা বলতে চাচ্ছে না, অথবা, আমার যুক্তিতে সে হার মেনেছে।
সাজিদ কলিংবেল বাজালো।
.
ঘরের দরজা খুলে দিলো একটি তের-চৌদ্দ বছর বয়েসী ছেলে। সম্ভবত কাজের ছেলে। আমরা ভেতরে ঢুকলাম। ছেলেটি বললো,- ‘আপনারা এখানে বসুন।আমি কাকাকে ডেকে দিচ্ছি।’
.
ছেলেটা একদম শুদ্ধ বাংলায় কথা বলছে। বাড়ির মালিককে স্যার বা মালিক না বলে কাকা বলছে।সম্ভবত, উনার কোন গরীব আত্মীয়ের ছেলে হবে হয়তো। যাদের খুব বেশি টাকা-পয়সা হয়, তারা গ্রাম থেকে গরিব আত্মীয়দের বাসার কাজের চাকরি দিয়ে দয়া করে।
.
ছেলেটা ভদ্রলোককে ডাকার জন্য সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেলো।ঘরের ভেতরটা আরো চমৎকার। নানান ধরনের দামি দামি মার্বেল পাথর দিয়ে দেওয়াল সাজানো।
.
দু’তলার কোন এক রুম থেকে রবীন্দ্রনাথের গানের সুর ভেসে আসছে,- ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, তবে একলা চলো রে……’
আমি সাজিদকে বললাম,- ‘কি রে, তোর এরকম মোঘলাই ষ্টাইলের একটা খালু আছে, কোনদিন বললি না যে?’
.
সাজিদ রসকষহীন চেহারায় বললো,- ‘মোঘলাই ষ্টাইলের খালু তো, তাই বলা হয়নি।’
– ‘তোর খালুর নাম কি?’
– ‘এম.এম. আলি।’
.
ভদ্রলোকের নামটাও উনার বাড়ির মতোই গাম্ভীর্যপূর্ণ। আমি জিজ্ঞেস করলাম,- ‘এম. এম. আলি মানে কি?’
.
সাজিদ আমার দিকে তাকালো। বললো,- ‘মোহাম্মদ মহব্বত আলি।’
ভদ্রলোকের বাড়ি আর ঐশ্বর্যের সাথে নামটা একদম যাচ্ছে না। এইজন্যে হয়তো মোহাম্মদ মহব্বত আলি নামটাকে শর্টকাট করে এম.এম. আলি করে নিয়েছেন।
.
ভদ্রলোক আমাদের সামনের সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বসলেন। মধ্যবয়স্ক। চেহারায় বার্ধক্যের কোন ছাপ নেই। চুল পেকেছে, তবে কলপ করায় তা ভালোমতো বোঝা যাচ্ছে না।
.
তিনি বললেন,- ‘তোমাদের মধ্যে সাজিদ কে?’
আমি লোকটার প্রশ্ন শুনে অবাক হলাম খুব। সাজিদের খালু, অথচ সাজিদকে চিনে না। এটা কি রকম কথা?
সাজিদ বললো,- ‘জ্বি, আমি।’
– ‘হুম, I guessed that’- লোকটা বললো। আরো বললো,- ‘তোমার কথা বেশ শুনেছি, তাই তোমার সাথে আলাপ করার ইচ্ছে জাগলো।’
আমাদের কেউ কিছু বললাম না। চুপ করে আছি।
.
লোকটা আবার বললো,- ‘প্রথমে আমার সম্পর্কে দরকারি কিছু কথা বলে নিই। আমার পরিচয় তো তুমি জানোই,সাজিদ। যেটা জানো না, সেটা হলো,- বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকে আমি একজন অবিশ্বাসী। খাঁটি বাংলায় নাস্তিক। হুমায়ুন আজাদকে তো চেনো, তাই না? আমরা একই ব্যাচের ছিলাম। আমি নাস্তিক হলেও আমার ছেলেমেয়েরা কেউই নাস্তিক নয়।সে যাহোক, এটা নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই।আমি ব্যক্তিস্বাধীনতায় বিশ্বাসী।’
সাজিদ বললো,- ‘খালু, আমি এসব জানি।’
.
লোকটা অবাক হবার ভান করে বললো,- ‘জানো? ভেরি গুড। ক্লেভার বয়।’
– ‘খালু, আমাকে ডেকে পাঠিয়েছেন কেনো তা বলুন।’
– ‘ওয়েট! তাড়াহুড়ো কিসের?’- লোকটা বললো।
এরমধ্যেই কাজের ছেলেটা ট্রে তে করে চা নিয়ে এলো।
আমরা চায়ের কাপে চুমুক দিলাম। লোকটাকে একটি আলাদা কাপে করে চা দেওয়া হলো। সেটা চা নাকি কফি, ঠিক বোঝা যাচ্ছে না।
.
লোকটি বললো,- ‘সাজিদ, আমি মনে করি, তোমাদের ধর্মগ্রন্থ, আই মিন আল কোরান, সেটা কোন ঐশী গ্রন্থ নয়। এটা মুহাম্মদের নিজের লেখা একটি বই।মুহাম্মদ করেছে কি, এটাকে জাষ্ট স্রষ্টার বাণী বলে চালিয়ে দিয়েছে।’
.
এইটুকু বলে লোকটা আমাদের দু’জনের দিকে তাকালো। হয়তো বোঝার চেষ্টা করলো আমাদের রিএ্যাকশান কি হয়।
.
আমরা কিছু বলার আগেই লোকটি আবার বললো, – ‘হয়তো বলবে, মুহাম্মদ লিখতে-পড়তে জানতো না। সে কিভাবে এরকম একটি গ্রন্থ লিখবে? ওয়েল! এটি খুবই লেইম লজিক। মুহাম্মদ লিখতে পড়তে না জানলে কি হবে, তার ফলোয়ারদের অনেকে লিখতে-পড়তে পারতো।উচ্চ শিক্ষিত ছিলো। তারা করেছে কাজটা।মুহাম্মদের ইশারায়।’
.
সাজিদ তার কাপে শেষ চুমুক দিলো। তখনও সে চুপচাপ।
লোকটা বললো,- ‘কিছু মনে না করলে আমি একটি সিগারেট ধরাতে পারি? অবশ্য, কাজটি ঠিক হবে না জানি।’
আমি বললাম,- ‘শিওর!’
এতক্ষণ পরে লোকটি আমার দিকে ভালোমতো তাকালো। একটি মুচকি হাসি দিয়ে বললো,- ‘Thank You…’
সাজিদ বললো,- ‘খালু, আপনি খুবই লজিক্যাল কথা বলেছেন। কোরান মুহাম্মদ সাঃ এর নিজের বানানো হতেও পারে। কারন, কোরান যে ফেরেস্তা নিয়ে আসতো বলে দাবি করা হয়, সেই জিব্রাঈল আঃ কে মুহাম্মদ সাঃ ছাড়া কেউই কোনদিন দেখেনি।’
লোকটা বলে উঠলো,- ‘এক্সাক্টলি, মাই সান।’
– ‘তাহলে, কোরানকে আমরা টেষ্ট করতে পারি, কি বলেন খালু?’
– ‘হ্যাঁ হ্যাঁ, করা যায়…….’
.
সাজিদ বললো,- ‘কোরান মুহাম্মদ সাঃ এর বানানো কি না, তা বুঝতে হলে আমাদের ধরে নিতে হবে যে, মুহাম্মদ সাঃ স্রষ্টার কোন দূত নন। তিনি খুবই সাধারন, অশিক্ষিত একজন প্রাচীন মানুষ।’
.
লোকটা বললো,- ‘সত্যিকার অর্থেই মুহাম্মদ অসাধারণ কোন লোক ছিলো না। স্রষ্টার দূত তো পুরোটাই ভূয়া।’
সাজিদ মুচকি হাসলো। বললো,- ‘তাহলে এটাই ধরে নিই?’
.
– ‘হুম’- লোকটার সম্মতি।
.
সাজিদ বলতে লাগলো,- ‘খালু, ইতিহাস থেকে আমরা জানতে পারি, হজরত ঈউসুফ আঃ এর জন্ম হয়েছিলো বর্তমান ফিলিস্তিনে। ঈউসুফ আঃ ছিলেন হজরত ঈয়াকুব আঃ এর কনিষ্ঠতম পুত্র। ঈয়াকুব আঃ এর কাছে ঈউসুফ আঃ ছিলেন প্রাণাধিক প্রিয়।কিন্তু, ঈয়াকুব আঃ এর এই ভালোবাসা ঈউসুফ আঃ এর জন্য কাল হলো। তার ভাইয়েরা ষড়যন্ত্র করে ঈউসুফ আঃ কে কূপে নিক্ষেপ করে দেয়।
.
এরপর, কিছু বণিকদল কূপ থেকে ঈউসুফ আঃ কে উদ্ধার করে তাকে মিশরে নিয়ে আসে। তিনি মিশরের রাজ পরিবারে বড় হন।ইতিহাস মতে, এটি ঘটে- খ্রিষ্টপূর্ব চতুর্দশ শতকের আমেনহোটেপের রাজত্বকালের আরো তিন’শ বছর পূর্বে। খালু, এই বিষয়ে আপনার কোন দ্বিমত আছে?’
.
লোকটা বললো,- ‘নাহ। কিন্তু, এগুলো দিয়ে তুমি কি বোঝাতে চাও?’
.
সাজিদ বললো,- ‘খালু, ইতিহাস থেকে আমরা আরো জানতে পারি, খ্রিষ্টপূর্ব চতুর্দশ শতকে চতুর্থ আমেনহোটেপের আগে যেসকল শাসকেরা মিশরকে শাসন করেছে, তাদের সবাইকেই ‘রাজা’ বলে ডাকা হতো। কিন্তু, খ্রিষ্টপূর্ব চতুর্থ শতকে চতুর্থ আমেনহোটেপের পরে যেসকল শাসকেরা মিশরকে শাসন করেছিলো, তাদের সবাইকে ‘ফেরাঊন’ বলে ডাকা হতো।
.
ঈউসুফ আঃ মিশরকে শাসন করেছিলেন খ্রিষ্টপূর্ব চতুর্দশ শতকের চতুর্থ আমেনহোটেপের আগে।আর, মূসা আঃ মিশরে জন্মলাভ করেছিলেন চতুর্থ আমেনহোটেপের কমপক্ষে আরো দু’শো বছর পরে।অর্থাৎ, মূসা আঃ যখন মিশরে জন্মগ্রহন করেন, তখন মিশরের শাসকদের আর ‘রাজা’ বলা হতো না, ‘ফেরাঊন’ বলা হতো।’
– ‘হুম, তো?’
– ‘কিন্তু খালু, কোরানে ঈউসুফ আঃ এবং মূসা আঃ দুইজনের কথাই আছে। অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে, কোরান ঈউসুফ আঃ এর বেলায় শাসকদের ক্ষেত্রে ‘রাজা’ শব্দ ব্যবহার করলেও, একই দেশের, মূসা আঃ এর সময়কার শাসকদের বেলায় ব্যবহার করেছে ‘ফিরাঊন’ শব্দটি। বলুন তো খালু, মরুভূমির বালুতে উট চরানো বালক মুহাম্মদ সাঃ ইতিহাসের এই পাঠ কোথায় পেলেন? তিনি কিভাবে জানতেন যে, ঈউসুফ আঃ এর সময়ের শাসকদের ‘রাজা’ বলা হতো, মূসা আঃ সময়কার শাসকদের ‘ফেরাঊন’? এবং, ঠিক সেই মতো শব্দ ব্যবহার করে তাদের পরিচয় দেওয়া হলো?’
মহব্বত আলি নামের ভদ্রলোকটি হো হো হো করে হাসতে লাগলো। বললো,- ‘মূসা আর ঈউসুফের কাহিনী তো বাইবেলেও ছিলো। মুহাম্মদ সেখান থেকে কপি করেছে, সিম্পল।’
.
সাজিদ মুচকি হেসে বললো,- ‘খালু, অ্যাস এ ম্যাটার অফ ফ্যাক্ট, বাইবেল এই জায়গায় চরম একটি ভুল করেছে। বাইবেল ঈউসুফ আঃ এবং মূসা আঃ দুজনের সময়কার শাসকদের জন্যই ‘ফেরাঊন’ শব্দ ব্যবহার করেছে, যা ঐতিহাসিক ভুল। আপনি চাইলে আমি আপনাকে বাইবেলের ওল্ড টেষ্টামেণ্ট থেকে প্রমান দেখাতে পারি।’
.
লোকটা কিছুই বললো না। চুপ করে আছে। সম্ভবত, উনার প্রমান দরকার হচ্ছে না।
.
সাজিদ বললো,- ‘যে ভুল বাইবেল করেছে, সে ভুল অশিক্ষিত আরবের বালক মুহাম্মদ সাঃ এসে ঠিক করে দিলো, তা কিভাবে সম্ভব, যদি না তিনি কোন প্রেরিত দূত না হোন, আর, কোরান কোন ঐশি গ্রন্থ না হয়?’
.
লোকটি চুপ করে আছে। এরমধ্যেই তিনটি সিগারেট খেয়ে শেষ করেছে। নতুন আরেকটি ধরাতে ধরাতে বললো,- ‘হুম, কিছুটা যৌক্তিক।’
.
সাজিদ আবার বলতে লাগলো,-
‘খালু, আর রহমান নামে কোরানে একটি সূরা আছে। এই সূরার ৩৩ নম্বর আয়াতে বলা হচ্ছে,-
‘হে জ্বীন ও মানুষ! তোমরা যদি আসমান ও জমিনের সীমানায় প্রবেশ করতে পারো, তবে করো। যদিও তোমরা তা পারবেনা প্রবল শক্তি ছাড়া’
.
মজার ব্যাপার হলো, এই আয়াতটি মহাকাশ ভ্রমণ নিয়ে। চিন্তা করুন, আজ থেকে ১৪০০ বছর আগের আরবের লোক, যাদের কাছে যানবাহন বলতে কেবল ছিলো উট আর গাধা, ঠিক সেই সময়ে বসে মুহাম্মদ সাঃ মহাকাশ ভ্রমণ নিয়ে কথা বলছে, ভাবা যায়?
.
সে যাহোক, আয়াতটিতে বলা হলো,- ‘যদি পারো আসমান ও জমিনের সীমানায় প্রবেশ করতে, তবে করো’ ,
এটি একটি কন্ডিশনাল (শর্তবাচক) বাক্য। এই বাক্যে শর্ত দেওয়ার জন্য If (যদি) ব্যবহার করা হয়েছে।
.
খালু, আপনি যদি এ্যারাবিক ডিকশনারি দেখেন, তাহলে দেখবেন, আরবিতে ‘যদি’ শব্দের জন্য দুটি শব্দ আছে। একটি হলো ‘লাও’, অন্যটি হলো ‘ইন’। দুটোর অর্থই ‘যদি।’ কিন্তু, এই দুটোর মধ্যে একটি সুক্ষ্ম পার্থক্য আছে। পার্থক্যটি হলো- আরবিতে শর্তবাচক বাক্যে ‘লাও’ তখনই ব্যবহার করা হয়, যখন সেই শর্ত কোনভাবেই পূরণ সম্ভব হবে না। কিন্তু, শর্তবাচক বাক্যে ‘যদি’ শব্দের জন্য যখন ‘ইন’ ব্যবহার করা হয়, তখন নিশ্চয় এই শর্তটা পূরণ সম্ভব।
.
আশ্চর্যজনক ব্যাপার, কোরানে সূরা আর রহমানের ৩৩ নম্বর আয়াতটিতে ‘লাও’ ব্যবহার না করে ‘ইন’ ব্যবহার করা হয়েছে। মানে, কোন একদিন জ্বীন এবং মানুষেরা মহাকাশ ভ্রমণে সফল হবেই।আজকে কি মানুষ মহাকাশ জয় করেনি? মানুষ চাঁদে যায়নি? মঙ্গলে যাচ্ছে না?
.
দেখুন, ১৪০০ বছর আগে যখন মানুষের ধারনা ছিলো একটি ষাঁড় তার দুই শিংয়ের মধ্যে পৃথিবীকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, ঠিক তখন কোরান ঘোষণা করছে, মহাকাশ ভ্রমণের কথা। সাথে বলেও দিচ্ছে, একদিন তা আমরা পারবো। আরবের নিরক্ষর মুহাম্মদ সাঃ কিভাবে এই কথা বলতে পারে?’
এম.এম. আলি ওরফে মোহাম্মদ মহব্বত আলি নামের এই ভদ্রলোকের চেহারা থেকে ‘আমি নাস্তিক, আমি একেবারে নির্ভুল’ টাইপ ভাবটা একেবারে উধাও হয়ে গেলো। এখন তাকে যুদ্ধাহত এক ক্লান্ত সৈনিকের মতোন দেখাচ্ছে।
.
সাজিদ বললো,- ‘খালু, খুব অল্প পরিমাণ বললাম। এরকম আরো শ খানেক যুক্তি দিতে পারবো, যা দিয়ে প্রমান করে দেওয়া যায়, কোরান মুহাম্মদ সাঃ এর নকল করে লেখা কোন কিতাব নয়, এটি স্রষ্টার পক্ষ থেকে আসা একটি ঐশি গ্রন্থ। যদি বলেন, মুহাম্মদ সাঃ নিজের প্রভাব বিস্তারের জন্য এই কিতাব লিখেছে, আপনাকে বলতে হয়, এই কিতাবের জন্যই মুহাম্মদ সাঃ কে বরণ করতে হয়েছে অবর্ণনীয় কষ্ট, যন্ত্রণা।
.
এই কিতাবের বাণী প্রচার করতে গিয়েই তিনি স্বদেশ ছাড়া হয়েছিলেন।তাকে বলা হয়েছিলো, তিনি যা প্রচার করছেন তা থেকে বিরত হলে তাকে মক্কার রাজত্ব দেওয়া হবে। তিনি তা গ্রহন করেন নি। খালু, নিজের ভালো তো পাগলও বুঝে। মুহাম্মদ সাঃ বুঝলো না কেনো? এসবই কি প্রমান করেনা কোরানের ঐশি সত্যতা?’
লোকটা কোন কথাই বলছেনা। সিগারেটের প্যাকেটে আর কোন সিগারেট নেই।
.
আমরা উঠে দাঁড়ালাম। বের হতে যাবো, অমনি সাজিদ ঘাঁড় ফিরিয়ে লোকটাকে বললো, – ‘খালু, একটি ছোট প্রশ্ন ছিলো।’
– ‘বলো।’
– ‘আপনার বাগানে লাল রঙের কোন ফুল গাছ নেই। কেনো?’
লোকটি বললো,- ‘আমি রেড কালার ব্লাইন্ড। লাল রঙ দেখি না।’
সাজিদ আমার দিকে ফিরলো। অবাক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,- ‘জ্যোতিষী আরিফ আজাদ, ইউ আর কারেক্ট।’
=======================
Previous Post
Next Post

post written by:

Siddikur Rahman Rayhan from Bangladesh is a versatile individual with a keen interest in technology, cricket, politics, and Islamic studies. With a strong academic background and proficiency in multiple languages, he excels in blogging, YouTube, web development, Graphix Design and content creation. Skilled in video editing, meme generation, and photography, Rayhan is dedicated to personal and professional growth, seeking connections with like-minded individuals to support his endeavors.

0 Comments: