আরবি সাহত্যে ইসলামী ভাবধারা পি ডি এফ ফ্রী ডাউনলোড
লেখকঃ ড. ইফতিখারুল আলম মাসউদ
প্রকাশনীঃ আলীগড় লাইব্রেরী
আরবি সাহিত্যে ইসলামি ভাবধারা – আরবের বুকে, অতঃপর সমগ্র বিশ্বে ইসলামের উত্থান ও বিস্তৃতি মানবসমাজের ধর্মীয় সামাজিক ও রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ইতিহাসে চরম বিস্ময়কর একটি ঘটনা। আর্থ সামাজিক বিশ্লেষকগণ চিন্তা করে গলদঘর্ম হয়ে যান, কী করে হতদরিদ্র আবার চরম অসভ্য ও বর্বর একটি জাতি এত ক্সিপ্রগতিতে তৎকারীন বিশ্বের প্রচন্ড শক্তিধর দু’ পরশক্তি, রোমান ও পারস্য সাম্রাজ্যকে করতলগত করে একটি সুষম জাতিগঠনমূলক জীবনব্যাপ্ত দ্বারা মানুষকে সভ্যতার সর্বোচ্চ মার্গে উন্নীত করতে সক্ষম হল। কী করে ইসলাম নামীয় এই জীবনব্যবস্থা প্রাচ্যপ্রতিচ্যকে সুদৃঢ় বন্ধনে আবদ্ধ করে আধুনিককালের গবেষণার দ্বার উন্মুক্ত করে মানবসভ্যতাকে তার উৎকৃষ্টতম শিখরে উন্নীত করতে সক্ষম হল।
Read More
Read More
Read More
Read More
Read More
আরবি ভাষা ও সাহিত্যে ইসলামের প্রভাব
প্রাচীন আরবের প্রাচীনতম ভাষা
আরবী। মু’আল্লাকার কবিতাগুলো
কাবা প্রাচীরে ঝুলিয়ে দেয়া হলেও
ইসলাম পূর্ব যুগে তা কখনোপুস্তকাকারে
প্রকাশিত হয় নি। সুতরাং আরবী ভাষা
ও সাহিত্যে প্রথম পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ হচ্ছে
কুরআন। শুধু ভাষার দিক দিয়ে নয়, ভাষা
ও সাহিত্যে এটি সর্বপ্রাচীন পুস্তক
হিসাবে তর্কাতীত। সুরার সংখ্যা মেট
১১৪ টি। নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর
নির্দেশ অনুসারে কুরআনের সুরা গুলো
আকার এবং দৈর্ঘ্য অনুসারে বিন্যস্ত।
ভাষার সৌষ্ঠব, শব্দ ধ্বনির ব্যঞ্জনা,
বাক্য বিন্যাসের সরসতার এটি অনবদ্য।
যে রচনারীতি ক্লাসিক্যল আরবী
হিসেবে খ্যাত, তার শ্রেষ্ঠ নিদর্শন
কুরআন। এর ভাষা গদ্য হলেও এর মধ্যে
শ্রেষ্ঠ কাব্যের সমস্ত গুণ বিদ্যমান।
উপমা, উৎপ্রেক্ষা, অনুপ্রাস, দীর্ঘ এবং
হ্রস ধ্বনির বৈচিত্র, স্বর ও ব্যঞ্জন বর্ণের
সমাবেশ প্রভৃতি এমন ভাবে প্রয়োগ করা
হয়েছে যে পাঠক বিমুগ্ধ না হয়ে পারে
না। কোন কোন অংশে গদ্যের মধ্যে
মিলের ব্যবহারও লক্ষণীয়। কুরআনে বহু
বিষয়ের উল্লেখ আছে। মোটামুটি
ভাবে বলা চলে যে, এর মধ্যে ধর্মের
অর্থ, প্রাচীন ইতিহাসের শিক্ষা,
ব্যক্তি এবং গোষ্ঠী জীবনের আইন
কানুন আলোচিত হয়েছে। বিষয় এবং
ভাবধারা অনুসারে ভাষার তারতম্য
কুরআনে লক্ষ্য করা যায়। কোন কোন
অংশে যুক্তির সাহায্যে বক্তব্য
উপস্থাপিত হয়েছে। আবার কোন কোন
অংশের ভাষা বিশুদ্ধ কবিতার মত
অনুভূতি-নির্ভর। বর্তমান যুগেও শুধু ধর্ম-
পুস্তক নয়, উৎকৃষ্টতম সাহিত্য হিসাবে
মুসলিম ও অমুসলিম আরবদের মধ্যে কুরআন
সমাদৃত।
নবীর সানি্নধ্যে থাকার সুযোগ
যাদের ঘটেছিল, তাঁরা তাঁর কথোপকথন
এবং আচার ব্যবহার সম্বন্ধে অনেক তথ্য ও
বাণী সংগ্রহ করেন। এ গুলোকে হাদীস
বলা হয়। পরবর্তী যুগে হাদীসের অনেক
গুলো সংগ্রহ ও সংকলন বের হয়। হাদীসও
আরবী ভাষা ও সাহিত্যের একটি
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শাখা। কুরআন, হাদীস ও
তাফসীর আরবী ভাষা ও সাহিত্যের এ
তিন নতুন শাখার উদ্ভব নবী (সঃ) এর
জীবদ্দশায় হয়। ৬৫১ খৃষ্টাব্দে খলীফা
উসমানের শাসনকালে কুরআনের
বিক্ষিপ্ত পাণ্ডুলিপিগুলো একত্রীভূত
করে প্রকাশের ব্যবস্থা হয়। তিনি কবি
হিসেবে প্রসিদ্ধ। তাঁর রচনাবলী দশম
শতাব্দীতে সংকলিত হয়। মুহাম্মদ (সঃ)
এর কন্যা ফাতিমা (রাঃ) এর নামেও
কিছু কিছু কবিতা প্রচলিত আছে। নবী
(সঃ) এর জীবদ্দশায় প্রতি শুক্রবার জুমার
নামাযের পর এবং বিশেষ বিশেষ
অনুষ্ঠানে ভাষণ দিতেন। জুমার
নামাযের সাপ্তাহিক ভাষণের নিয়ম
ইসলামে একটা অনুষ্ঠানে পরিণত হয়। এর
ফলে আরবী গদ্যের উৎকর্ষ বৃদ্ধি পেতে
থাকে। কারণ বক্তারা স্বভাবতই সুন্দর ও
সাবলীল ভাষায় শ্রোতৃমণ্ডলীর সমক্ষে
নিজেদের বক্তব্য প্রকাশ করতে প্রয়াসী
হতেন।
কুরআন ও হাদীস আরবী ভাষা ও
সাহিত্যে যে নব যুগের সূচনা করে, তার
প্রভাব পরবর্তী যুগে সাহিত্যের নানা
দিকে নানা শাখায় বিস্তৃত হতে
থাকে। মুহাম্মদ (সঃ) এর মৃতু্যর পর
একাদিক্রমে আবু বকর, উমর উসমান ও আলী
(রাঃ) খলীফা নির্বাচিত হন। উমাইয়া
আমলে আরবরা গ্রীস ও রোমের
সংস্কৃতির সংগে ঘনিষ্ঠভাবে
পরিচিত হতে থাকেন। প্রথম উমাইয়া
খলীফা মু’আবিয়ার স্ত্রী মাইমুনা
কবিতা চর্চা করতেন। এই বেদুইন তনয়া
প্রায়ই দামাস্কের রাজ প্রাসাদে বসে
বেদুইন জীবনের জন্য আক্ষেপ করতেন।
মু’আবিয়ার পুত্র ইয়াযীদ নিজেও কবি
ছিলেন। তিনি বিলাস প্রিয় জীবর
যাপন করতেন। ইয়াযীদের প্রেমাত্মক
কবিতা প্রসিদ্ধ। সপ্তদশ শতাব্দীর
প্রারম্ভে একদল ইংরেজ কবি যেমন
বিস্ময়কর উপমা ও উৎপ্রেক্ষার ব্যবহার
করে পাঠকের চমক লাগিয়ে দিতেন,
ইয়াযীদের কোন কোন কবিতায় তার
পূর্বাভাস আছে। তিনি এক স্থানে
লিখেছেন, ‘আমার প্রিয়তমার দিকে
তাকালে সূর্যও দ্বিতীয়বার উদয় হতে
পারবে না। তার তেজ এমনি যে সব
কিছুকে দগ্ধ করে ভষ্ম করে ফেলে।’
আব্বাসী যুগে খলিফা হারুনুর রশীদ ও
মামুন স্বয়ং সাহিত্য ও বিজ্ঞানের
পৃষ্ঠপোষকতা করেন। স্পেনে স্থানীয়
জনগণও আরবী ভাষাকে সংস্কৃতির বাহন
হিসেবে গ্রহণ করেছিল। বহু ইউরোপীয়
শিক্ষার্থী স্পেনের বিশ্ববিদ্যালয়গ
ুলোতে অর্ধয়ন করতে আসতো। তখন আরবী
রচনারীতি আরও পরিবর্তিত হতে
থাকে। সাহিত্য, ইতিহাস, দর্শন,
বিজ্ঞান প্রভৃতি বিষয়ক রচনায় আরবী
ভাষা উত্তরোত্তর সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে। এ
যুগে খুরাসান ও ইরানের অনেক কবি
আরবী ভাষার চর্চা করতেন। বহু
সাহিত্যিক আরবীতে বই-পত্র লিখতেন।
ইবনে কুতাইবা সাহিত্য সমালোচনা
সম্পর্কে কতিপয় গ্রন্থ সংকলন করেন। দশম
শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ গদ্য লেখক ছিলেন
বদিউজ্জামান হামাদানী। অপর
বিখ্যাত মাকামাত রচনা করেন
হারীরী। ৮ম ও ৯ম শতাব্দীতে ইবনে
ইসহাক ও তাবারী আরবীতে ইতিহাস
গ্রন্থ রচনা করেন। চতুর্দশ শতাব্দীতে
নুওয়াইরী একটি বিশ্বকোষ রচনা করেন।
এটি পাঁচ খন্ডে বিভক্ত ছিল। এভাবে
আরবী ভাষা ও সাহিত্য যুগে যুগে সমৃদ্ধ
হয়ে আধুনিককালে এসে উপনীত হয় এবং
উন্নতির চরম স্তরে পেঁৗছে যায়।
0 Comments: